সালেহ নোমান:
বিজনেসটুডে২৪:
কর্ণফুলী নদীর প্রায় ৩১ মিটার নীচ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম এবং দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। ইতোমধ্যে টানেল প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, টানেল পৌছেছে নদীর মাঝামাঝিতে।
টানেল বোরিং মেশিন টিভিএম নামের ৯৫ মিটার দীর্ঘ একটি দানব আকৃতির যন্ত্র দিয়ে টানেলের টিউব বসানো হচ্ছে। ৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলে প্রতিটি ২৪৫০ মিটার দীর্ঘ দুটি টিউব বসোনো হবে, দুই লেইনে গাড়ী চলাচল করতে পারবে প্রতিটি টিউবে বসানো কংক্রিটের রাস্তায়। একটি টিউবের ১২২৮ মিটার বসানো সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বিবিএম।
বিবিএমের তত্বাবধানে প্রায় ৯৮৮০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের পরামর্শক চীনের চায়না কমিউনিকেশান কনষ্ট্রাকশন কোম্পানী সিসিসিসি। প্রকল্পটিতে চীনের প্রায় ৫৫০ প্রকৌশলী ও অনান্য কর্মকর্তা, কর্মচারি কাজ করছে। আর বিবিএমের জনবল নিয়োজিত আছে ৭৫০জনের মত।
সিল্ড ড্রাইভেন ম্যাথড (Shield Driven Method) ব্যবহার করে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে মাটি খনন করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে টিবিএম, একই সাথে টিউবের দুই মিটার অংশ বসাচ্ছে। প্রায় আধা মিটার পুরু কংক্রিকেট তৈরী দুই মিটার দীর্ঘ টিউবের অংশগুলো নিয়ে আসা হয়েছে চীন থেকে।
বিবিএমের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, টিবিএমের সামনের অংশ দিয়ে মাটি কাটা হয়।মাটি পরিষ্কারের পর ওই এলাকা স্থিতিশীল করানো হয় বিশেষ উপায়ে। এরপর টিবিএমের পেছনের অংশ দিয়ে টিউবের কনক্রিটের সেগম্যান্টগুলো সামনে পাঠানো হয় রেল ট্রাকের সাহায্যে।
টিবিএম মেশিনে একই সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর, অক্সিজেন ও বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করার জন্য ভেন্টিলেশান ব্যবস্থা আছে। আছে টানেল নির্মাণের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা্ও।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ জানিয়েছেন, “টিবিএম একটি জটিল, আধুনিক ও স্পর্শকাতর যন্ত্র, যা অনেকগুলো যন্ত্রের সমন্বয়ে তৈরী। এর মধ্যে যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক এবং আরো অন্য ধরনের প্রকৌশল ব্যবস্থার সমন্বয় করতে হয়।”
এখন পযন্ত বড় ধরনের কোন জটিলতা ছাড়াই কাজ এগিয়ে চলছে, ছোট খাট সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষনিকভাবে সেটা সমাধান করা হয়। বর্তমান গতিতে কাজ অব্যাহত রাখা গেলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়ে টানের নির্মাণ কাজ শেষ হবে,” উল্লেখ করেন প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ।
বিবিএ সূত্রে জানাগেছে, নির্মাণ চলাকালে এবং পরবর্তীতে টানেলের সুরক্ষা ও ব্যবহারকারিদের নিরাপত্তার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। টানেলের দুটি টিউবের মধ্যে দূরত্ব থাকছে ১২মিটার। এর মধ্যে তিনটি স্থানে দুটি টিউবের মধ্যে জরুরী চলাচল পথ রাখা হবে। প্রতিটি টিউবের সাতটি স্থানে রাস্তার নীচ দিয়ে জরুরী উদ্ধারে ব্যবস্থা থাকবে।
টানেলে গাড়ি চলাচল শুরু হলে দুইপ্রান্তে সব সময় প্রস্তুত থাকবে বিশেষায়িত জরুরী উদ্ধারকারি দল এবং ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ ইউনিট। সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি বাতাস ও অক্সিজেন ভেন্টিলেশানের ব্যবস্থা থাকছে।
চট্টগ্রাম শহরকে কর্নফুলী নদীর দুই তীরে ছড়িয়ে দেয়া এবং কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রাম শহরের সড়ক পথে দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে এই টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে, যৌথভাবে যার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সী জিন পিং ২০১৭ সালে ১৪ অক্টোবর। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়রীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গায় টানেল খনন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সামনে থেকে টানেল শুরু হয়ে নেভাল একাডেমীর মূল ফটকের বা্হিরে নীচ দিয়ে নদী অতিক্রম করবে আর অনোয়ারার কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানী কাফকো এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানী সিইউএফএলের মাঝ দিয়ে টানেল শেষ হবে।
টানেল প্রকল্পের অধীনে আনোয়ারা অংশে ৭৪০ মিটার ওভার ব্রীজসহ প্রায় পাচ কিলোমিটার এবং পতেঙ্গা অংশে প্রায় আধা কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্প ব্যয়ের ৯৮৮০ কোটি টাকার মধ্যে চায়না এক্সিম ব্যাংকের লোন ৫৯১৩ কোটি টাকা। অবশিষ্ট টাকার জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।