Home Second Lead ৭০ বছরে ‘সংবাদ’

৭০ বছরে ‘সংবাদ’

আজ ১৭ মে, ২০২০ জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক ও আদর্শবাদী সাংবাদিকতার মুখপত্র ‘দৈনিক সংবাদ’এর ৭০ বছরে পদাপর্ণ। দেশের ঐতিহ্যবাহী এই পত্রিকাটি ১৯৫১ সালের ১৭ মে ব্যবসায়ী আলহাজ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের মালিকানায় এবং খায়রুল কবিরের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।

১৯৫২ সালে পত্রিকাটি কিনে নেয় মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর ‘সংবাদ’ প্রকাশনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। তখন সংবাদ কিনে নেন আহমদুল কবির। তারই উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে গঠিত হয় দি সংবাদ লিমিটেড কোম্পানি। ২০০৩ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ‘সংবাদ’-এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৪ সাল থেকে গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষের অদ্বিতীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে ‘সংবাদ’ মানবতার স্বরূপ সন্ধানে নিয়ত সক্রিয়। প্রগতি ধারার পত্রিকা হিসেবে এ দেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে শাণিত করেছে দৈনিক ‘সংবাদ’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে একাত্ম ‘সংবাদ’ তার মাথা না নোয়ানোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এগিয়ে চলেছে।

দীর্ঘ চলার পথে দৈনিক সংবাদ যেসব কৃতী সাংবাদিকের সৃজনশীলতায় আলোকিত হয়েছে এবং ‘সংবাদ’-এর মাধ্যমে এই জাতির মনন গঠনে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন নাসির উদ্দিন আহমেদ, খায়রুল কবির, আহমদুল কবির, রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, সৈয়দ নুরুদ্দিন, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দিন, শহীদুল্লাহ কায়সার, তোহা খান, সন্তোষ গুপ্ত, বজলুর রহমান প্রমুখ।

পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে সামরিক স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার ছিল। ১৯৬৪ সালে দাঙ্গার বিরুদ্ধে ‘সংবাদ’-এর দাঙ্গাবিরোধী ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আর এ ভূমিকার কারণে দাঙ্গাকারীরা সেদিন আহমদুল কবিরের ঘোড়াশালের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় ‘সংবাদ’ যে ভূমিকা পালন করে তা ইতিহাসে লেখা রয়েছে। ‘সংবাদ’ তখন বাঙালি জাতীয়তার অনন্য মুখপত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ৬ দফা ও ১১ দফার আন্দোলনে ‘সংবাদ’-এর বিশিষ্ট ভূমিকা সংগ্রামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের খবর ‘সংবাদ’ যেভাবে তুলে ধরে, তেমনি গুরুত্বসহকারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের খবর ছাপতেও পিছপা হয়নি। আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর ৮ মার্চ একমাত্র ‘সংবাদ’-এর শিরোনাম ছিল- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। অন্য কোন পত্রিকায় এ রকম শিরোনাম সেদিন দিতে পারেনি।

১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আঘাতের কালো হাত ‘সংবাদ’কেও স্পর্শ করে। পুড়িয়ে দেয়া হয় ‘সংবাদ’ কার্যালয়। ২৮ মার্চ সংবাদ-এর সঙ্গেই ভস্মীভূত হন সাংবাদিক শহীদ সাবের। নানা প্রলোভন ও হুমকির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘সংবাদ’ আর প্রকাশিত হয়নি। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন, মুক্তিযুদ্ধের পর সেদিন প্রথম সংবাদ বের হয়।